আজকের পোস্ট শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনারা জান্নাতের হুরদের নাম এবং জান্নাতি হুরদের সাথে কি কি করা যাবে সবকিছু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আসসালামু আলাইকুম আপনি যদি একজন মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই জান্নাত সম্পর্কে জেনে থাকবেন। জান্নাতের অনেক বড় একটি নিয়ামত হচ্ছে সেখানকার হুর।আমরা যারা দুনিয়ায় ভালো কাজ করব এবং পরকালে জান্নাত লাভ করতে পারব আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য রেখেছেন অনেক সুন্দর সুন্দর হুর পরী।
তো চলুন তাহলে এখন আমরা আমাদের আজকের এই পোষ্টের মূল টপিক গুলো সম্পর্কে আলোচনা করে শুরু করেছে। এই পোস্টে আমরা মূলত জান্নাতি হুরদের নাম সহ এই জান্নাতি হুরদের সাথে কি কি করা যাবে এবং হুরদের সর্দারনী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক –
জান্নাতি হুরদের নাম এবং জান্নাতের হুরদের নাম
যদিও জান্নাতি হুরদের নাম সম্পর্কে পবিত্র কোরআন কিংবা হাদিসে কোথাও সঠিকভাবে কিছু বলা হয়নি। এরপরেও এই হুরদের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য আমরা হাদিস থেকে পেতে পারি।
এরমধ্যে হুরদের চোখ হবে শুধুমাত্র কালো এবং সাদা। এই হুর গুলো হবে চিরকুমারী অর্থাৎ তারা আজীবন পর্যন্ত কুমারী থেকে যাবে কখনো তাদের বয়স বাড়বে না কিংবা তাদের শরীরের কোন অঙ্গের কোন ক্ষতি হবে না।
যদিও যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা সবাই চিরকুমার এবং চিরকুমারী হয়ে যাবে তাদের বয়স স্থগিত হয়ে যাবে তাদের বয়স কমবেও না কিংবা বাড়বেও না।
মুমিনদের জন্য আল্লাহ তায়ালা এই হুরদেরকে আলাদাভাবে সৃষ্টি করে রেখেছেন যেটা দ্বারা মুমিনরা জান্নাতের মধ্যে সুখ শান্তি লাভ করতে পারবে।
হুরদের গালার মধ্যে সে হার থাকবে সেটি তৈরি হবে মুক্ত দ্বারা । আর এই মুক্তা কোন দুনিয়ার মুক্তা নয় এটি হচ্ছে জান্নাতি মুক্তা যেটা সবথেকে বেশি সুন্দর এবং উজ্জ্বল।
যে সকল নারীগণ হুর হবে তাদের মুখ হবে সব থেকে জ্যোতির্ময় এবং উজ্জ্বল। এছাড়াও হাদিসের বর্ণনা পাওয়া যায় যে হুরদের গাল গুলো হবে গোলাপি রঙের।
পড়ুনঃ জান্নাতের পাখির নাম সমূহ জেনে রাখুন
এই হুড়দেরকে আল্লাহ তাআলা আলাদাভাবে শুধুমাত্র মুমিনদের জন্য সৃষ্টি করে রেখেছেন অর্থাৎ যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা হুরগুলো উপহার প্রদান করবেন।
যদিও জান্নাতি হুরদের নাম কিংবা জান্নাতের হুরদের নাম সম্পর্কে হাদিসে কোন নাম উল্লেখ করা হয়নি তবে বিভিন্ন ওলামায়ে কেরামগণ এই হুরদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বেশ কিছু নাম বলে থাকেন সেগুলি ।
- আয়মান মানে হলো সুখ
- রাহমা মনে দয়া
- শাকিরা এর অর্থ গায়িকা
- সেবিকা
- সুহাসিনী
এছাড়াও এই উহুদের যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আরও অনেক ধরনের জান্নাতের হুরদের নাম হতে পারে ।
জান্নাতি হুরদের সাথে কি কি করা যাবে
মনে রাখবেন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় জান্নাত এবং জান্নাতের হুরদের সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে এটা বলেছেন যে জান্নাতের মধ্যে এমন কিছু নিয়ামত বান্দাদেরকে দেওয়া হবে যা বান্দা কখনো ভাবতেও পারেনি।
এমনকি এটাও বলা হয়েছে যে জান্নাতের মধ্যে এমন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে যা এই পৃথিবীর কোন চোখ দেখে নাই কিংবা এই পৃথিবীর কোন কান এ বিষয়ে শুনে নাই।
তাহলে বুঝতেই পারছেন জান্নাতে কত বড় নিয়ামত আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে প্রদান করবে। যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তাদেরকে জান্নাতি হুর দেওয়া হবে।
অনেকের মনে প্রশ্নটি এসে থাকে যে জান্নাতি হুরদের সাথে কি কি করা যাবে? আমি তাদেরকে বলতে চাই আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে এটা কোথাও বলে নাই যে জান্নাতি হুরদের সাথে এটা করা যাবে এবং এটা করা যাবে না।
এখানে বলে রাখা ভালো আপনি জান্নাতি হুরদের সাথে যে কোন কিছু করতে পারবেন । অর্থাৎ আপনার মনের সমস্ত আশা-আখঙ্কা বাসনা এই হুর গুলো পূরণ করবে।
দুনিয়াতে আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে যা যা করতে পারেন, জান্নাতের মধ্যে এই হুর গুলোর সাথেও সেগুলো সহ আরো অনেক কিছু করতে পারবেন, যা আপনার মন চাইবে।
আশা করি এই জান্নাতি হুরদের সাথে কি কি করা যাবে সম্পর্কে যে প্রশ্নটি আমরা মনে এসেছিল সেই প্রশ্নটির উত্তর খুব সহজে পেয়ে গেছেন।
হুরদের সর্দারনী
আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে কাউকে অসংখ্য হুর প্রদান করবে আবার কাউকে কিছু সংখ্যক প্রদান করবে। এখানে বলে রাখা ভালো হাদিসে পাওয়া যায় যারা শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করে তাদেরকে ৭০ টি পর্যন্ত হুর প্রদান করা হবে।
যদিও আল্লাহ তাআলা এটা বলেছেন যে জান্নাতে মানুষের মন যা চাইবে সেটা সাথে সাথে পেয়ে যাবে। হুরের ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকম, মানুষ যেরকম হুর চাইবে তার থেকে শত শত গুণ ভালো এবং সুদর্শন হুর আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রদান করবেন।
কিন্তু অনেকের মনে এটা প্রশ্ন আসে যে হুরের সর্দারনী কি হবে. হাদিসে এই ব্যাপারে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে,
দুনিয়ায় যদি স্বামী স্ত্রী ভালো কাজ করে এবং স্বামী স্ত্রী একই সাথে জান্নাতে যায় তাহলে তাদেরকে একই জায়গায় বসবাস করানো হবে এবং একই জায়গায় রাখা হবে।
এখানে ওই স্বামী যে হুরগুলো পাবে সেগুলোর সরদারনি হবে তার দুনিয়ায় থাকা স্ত্রী। হুর গুলো থেকেও শত শত সুন্দরী এবং সুদর্শন হবে ওই ব্যক্তির স্ত্রী এবং সেই স্ত্রী হবে হুরদের সর্দারনী।
যদি কোন হুর তার স্বামীর সঙ্গে কিছু করতে চায় তাহলে অবশ্যই স্ত্রীর আদেশ নিতে হবে যদি স্ত্রী আদেশ দেয় তাহলে কেবল সে তার স্বামীর সাথে কিছু করতে পারবে।
হুরদের শারীরিক গঠন
আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছে যারা এই হুরদের শারীরিক গঠন নিয়ে অনেক ধরনের প্রশ্ন করে থাকেন। যদিও আল্লাহ তায়ালা কুরআন কিংবা হাদিসে সঠিকভাবে এই হুরদের শারীরিক গঠন বলেন নাই কিন্তু বিভিন্ন বর্ণনা থেকে এর অনুমান ঠিকই করতে পারা যায়।
কিন্তু এখানে বলে রাখা ভালো আল্লাহ তাআলা অসংখ্য জায়গায় এটা বলেছেন যে জান্নাতের সুখ শান্তি এবং নিয়ামত সম্পর্কে এই দুনিয়ায় কেউ কখনো ভাবতেও পারবেন না।
অর্থাৎ আপনি একটি সুখের কথা যতদূর পর্যন্তই কল্পনা করুন না কেন জান্নাতের সুখ তার থেকে হাজার হাজার গুণ বেশি হবে। ঠিক একই রকম ভাবে হুরদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য ।
অর্থাৎ এই হুর গুলোর শারীরিক গঠন এত সুন্দর হবে যা আমরা দুনিয়াতে কল্পনাও করতে পারব না। হুর হবে জান্নাতের সবথেকে সুন্দরী মহিলা গন। আর এই হুরগুলো সাথে জান্নাতি পুরুষরা যা খুশি তাই করতে পারবে এবং তাদেরকে সেবায় নিয়োজিত করতে পারবে।
বিভিন্ন বর্ণনায় এটা পাওয়া যায় যে যদি কোন জান্নাতি হুরের কোনো ওড়নার এক টুকরো অংশ পৃথিবীতে কোথাও ফেলে দেওয়া যাইতো তাহলে পুরো পৃথিবী সুগন্ধে ভরে যেত।
তাহলে এটা বুঝতেই পারছেন যে একটি হুরের মধ্যে কতটা সুগন্ধ এবং কতটা সুদর্শনীয় হবে। হুরদের শরীরের চামড়া এমন হবে যে বাহির থেকে তাদের শরীরের মধ্যে চলা রক্তের রং পর্যন্ত দেখা যাবে।
হুরের শারীরিক গঠন এমন হবে যা এই দুনিয়ার কোন চোখ আজ পর্যন্ত দেখে নাই। এমনকি এই দুনিয়ার কোন কান আজ পর্যন্ত এই বর্ণনাটি শোনে নাই।
এরপরেও আমরা বিভিন্ন হাদিস থেকে পাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদেরকে হুরের শারীরিক গঠন সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি।
হুরদের বয়স কত হবে
আমরা অনেক সময় এই হুরদের বয়স কত হবে এটা নিয়ে বিভিন্নজনকে প্রশ্ন করতে শুনে থাকি । যদি আপনার মনেও এই ধরনের প্রশ্ন যে হুরদের বয়স কত হবে সেটা আসে তাহলে এখানকার নিচের এই লেখাগুলো পড়তে থাকুন।
কুরআন এবং হাদিস থেকে পাওয়া যায় যে যারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের বয়স আর কখনো বাড়বে না। বিভিন্ন বর্ণনায় এটা পাওয়া যায় যে হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর মত চেহারা এবং সুঠাম দেহের অধিকারী করে তারপর জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আবার বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায় যে জান্নাতের মধ্যে সবাইকে 40 বছরের যুবক বানিয়ে তারপর প্রবেশ করানো হবে । তবে যেটাই হোক জান্নাতে সবাই থাকবে চিরকুমার এবং চিরকুমারী।
আল্লাহতায়ালা যে সকল হুর মুমিনদের জন্য রেখেছেন তারা সকলেই অনেক বেশি সুন্দর এবং কুমারী মেয়ে হবে। মুমিনদেরকে আল্লাহ তা’আলা এমন হুর প্রদান করবে যে এদেরকে আজ পর্যন্ত কেউ দেখে নাই কিংবা কেউ তাদের গায়ে স্পর্শ পর্যন্ত করে নাই ।
যত কিছুই করা হোক না কেন তাদের শরীরের কোন অংশের পরিবর্তন হবে না সারাজীবন সবকিছু একই রকম থাকবে ।
এছাড়াও এই হুর গুলো চির কুমারী থেকে যাবে অর্থাৎ তাদের বয়স ও আর বাড়বে না এবং তাদেরকে একদম যুবতী করেই মুমিনদেরকে প্রদান করা হবে ।
পরিশেষে
আজকের এই ছোট্ট পোস্ট এর মাধ্যমে পাঠকদের কে আমরা জান্নাতি হুরদের সম্পর্কে বেশকিছু ইনফরমেশন দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখানে আমরা এই জান্নাতের হুরদের নাম গুলো উল্লেখ করার পাশাপাশি জান্নাতি হুরদের সম্পর্কে আরো কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি।
আপনাদেরকে এই জান্নাতি হুরদের সাথে কি কি করা যাবে এবং হুরদের শারীরিক গঠন সম্পর্কেও বিস্তারিত বোঝানো হয়েছে।
আশা রাখতে পারি এই পোষ্ট পরার পরে আপনারা জান্নাতি হুরদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই অবশ্যই আল্লাহ তাআলার হুকুম আহকাম গুলো মেনে চলবেন তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনারাও জান্নাত লাভ করতে পারবেন।
নিজে নামাজ পড়বেন এবং অন্যদেরকেও নামাজ পড়তে উৎসাহিত করবেন এছাড়াও আল্লাহ তা’আলা যে সকল কাজ করতে নিষেধ করেছেন সেগুলো পরিত্যাগ করবেন ।